ভবিষ্যদ্বাণী এবং তার পূরণ
প্রিয় পাঠক, আসুন আমরা বাইবেল থেকে একটি প্রাসঙ্গিক অংশ পড়ি:
“তোমার [দাউদের] আয়ু শেষ হলে পর যখন তুমি তোমার পূর্বপুরুষদের কাছে চলে যাবে তখন আমি তোমার জায়গায় তোমার বংশের একজনকে, তোমার নিজের সন্তানকে বসাব এবং তার রাজ্য স্থির রাখব … তার রাজ-সিংহাসন আমি চিরকাল স্থায়ী করব। আমি হব তার পিতা আর সে হবে আমার পুত্র।” (২ সামুয়েল ৭:১২-১৪)
এই ভবিষ্যদ্বাণী থেকে স্পষ্ট যে ঈশ্বর দাউদের বংশ থেকে একজন শাসক আসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যার রাজ্য চিরকাল স্থায়ী হবে। এই প্রতিশ্রুতি আধ্যাত্মিকভাবে যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে পূর্ণতা লাভ করেছিল।
ইহুদি নেতাদের ভুল ধারণা
যীশুর সময়ে ইহুদি নেতারা মনে করতেন যে প্রতিজ্ঞাত মসীহ একজন দুনিয়াবী রাজা হবেন। তারা ভাবতেন, মসীহ ইসরায়েলের রাজনৈতিক মুক্তিদাতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। কিন্তু যীশুর রাজত্ব দুনিয়াবী ছিল না; এটি ছিল আধ্যাত্মিক।
যীশু নিজেই স্বীকার করেছিলেন যে তিনি ইহুদিদের রাজা:
“তাঁরা এই বলে যীশুর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে লাগলেন, ‘আমরা দেখেছি, এই লোকটা সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের লোকদের নিয়ে যাচ্ছে। সে সম্রাটকে কর দিতে নিষেধ করে এবং বলে সে নিজেই মসীহ, একজন রাজা।’ পীলাত যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি ইহুদীদের রাজা?’ যীশু বললেন, ‘আপনি ঠিক কথাই বলছেন।’” (লূক ২৩:১-৩)
যীশুর আধ্যাত্মিক রাজত্ব
যীশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে তাঁর রাজ্য দুনিয়ার নয়:
“যীশু বললেন, ‘আমার রাজ্য এই দুনিয়ার নয়। যদি আমার রাজ্য এই দুনিয়ার হত তবে আমি যাতে ইহুদী নেতাদের হাতে না পড়ি সেইজন্য আমার লোকেরা যুদ্ধ করত; কিন্তু আমার রাজ্য তো এখানকার নয়।’ পীলাত যীশুকে বললেন, ‘তাহলে তুমি কি রাজা?’ যীশু বললেন, ’আপনি ঠিকই বলেছেন যে, আমি রাজা। সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার জন্য আমি জন্মেছি আর সেইজন্যই আমি পৃথিবীতে এসেছি। যে কেউ সত্যের, সে আমার কথা শোনে।” (যোহন ১৮:৩৬-৩৭)
শিষ্যদের সাক্ষ্য
শিষ্য নথনেল যীশুকে স্বীকার করেছিলেন:
“এতে নথনেল যীশুকে বললেন, ‘প্রভু, আপনিই ঈশ্বরের পুত্র, আপনিই ইসরায়েলদের রাজা।’” (যোহন ১:৪৯)
খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের পরে পিতর ইহুদি জনগণের সামনে খ্রীষ্টের রাজত্বের ব্যাখ্যা দেন:
“ভাইয়েরা, এই কথা আমি নিশ্চয় করে বলতে পারি যে, রাজবংশের পিতা দাউদ মারা গেছেন, তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছে আর তাঁর কবর আজও এখানে রয়েছে। তিনি একজন নবী ছিলেন এবং তিনি জানতেন ঈশ্বর এই প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তাঁর সিংহাসনে তাঁরই একজন বংশধরকে তিনি বসাবেন। পরে কি হবে তা দাউদ দেখতে পেয়েছিলেন বলে মৃত্যু থেকে খ্রীষ্টের আবার জীবিত হয়ে ওঠা সম্বন্ধে বলেছিলেন যে, কবরে খ্রীষ্টকে ফেলে রাখা হয় নি এবং তাঁর শরীরও নষ্ট হয় নি। ঈশ্বর সেই যীশুকেই জীবিত করে তুলেছেন, আর আমরা সবাই তার সাক্ষী।” (প্রেরিত ২:২৯-৩৭)
পুনরুত্থান এবং আধ্যাত্মিক রাজত্বের প্রতিষ্ঠা
যীশু খ্রীষ্ট পুনরুত্থিত হয়ে শয়তানকে পরাজিত করেন এবং আধ্যাত্মিকভাবে সমস্ত জাতির উপর প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। যীশুর এই রাজত্ব দাউদের সিংহাসনের প্রতিজ্ঞার চূড়ান্ত পূর্ণতা।
পিতর আরও বলেন:
“এইজন্য সমস্ত ইসরাইল জাতি এই কথা নিশ্চিত ভাবে জানুন যে, যাঁকে আপনারা ক্রুশের উপরে হত্যা করেছিলেন ঈশ্বর সেই যীশুকেই প্রভু এবং খ্রীষ্ট - এই দুই পদেই নিযুক্ত করেছেন।” (প্রেরিত ২:৩৬)
সারমর্ম
যীশু খ্রীষ্টের রাজত্ব কোনো দুনিয়াবী রাজত্ব নয়; এটি আধ্যাত্মিক রাজত্ব, যা সমস্ত বিশ্বাসী এবং সত্যের অনুসারীদের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যীশু সেই প্রতিজ্ঞাত রাজা, যিনি দাউদের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী এবং যাঁর রাজ্য চিরন্তন।
ReplyForward |
Comments